File:Furfura sorif.jpg

Original file(1,040 × 780 pixels, file size: 117 KB, MIME type: image/jpeg)

Captions

Captions

Add a one-line explanation of what this file represents

Summary edit

Description
বাংলা: #মাওলানা আবূ বকর সিদ্দীকী (রহঃ) পীর ছাহেব ফুরফুরা দরবার শরীফঃ-

পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার জাংগী পাড়ার ফুরফুরা শরীফ একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে ১৮৫৭ খৃস্টাব্দের মহান সিপাহী বিপ্লবের কয়েক বছর আগে ঐতিহ্যবাহী সিদ্দীকী পরিবারে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেন তাঁর শুভনাম হযরত মওলানা শাহ্ সূফী আবূ বকর সিদ্দিকী রহমাতুল্লাহি আলায়ইহি, যিনি উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পীর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সাধারণত তিনি দাদা হুযূর কিবলাহ নামে মশহুর। মুজাদ্দিদ-ই যামান, আমীরুশ শরীআত হিসাবে তিনি ভূষিত হয়েছিলেন। মুজাদ্দিদ-ই যামান অর্থ যুগ-সংস্কারক। তার আবির্ভাব কালটা ছিল ব্রিটিশ আমল। সে কালে এদেশের মুসলিম সমাজে র্শিক, বিদা’আত, কুসংস্কার, কুফর, অন্ধবিশ্বাস এমনভাবে অনুপ্রবেশ করেছিল যে, একজন মুজাদ্দিদ বা সংস্কারকের প্রয়োজন প্রকট হয়ে উঠেছিল। সেই সময়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাদি আল্লাহু তাআলা আন্হুর বংশধারায়। এই বংশধারা সিদ্দীকী খান্দান নামে পরিচিত হয়। এই সিদ্দীকী খান্দান হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর পুত্র মুহম্মদ থেকে উৎসারিত হয়েছে। তাঁর পুত্র কাসেম মিসরে ছিলেন। কালক্রমে এই বংশের উত্তর পুরুষ খিলাফতের রাজধানী বাগদাদে আসেন। এই বংশের হযরত মনসুর বাগদাদী এক সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে তদানীন্তন বাংলায় আসেন এবং বালিয়া বাসন্তী নামক স্থানে এক যুদ্ধে জয়ী হন। যুদ্ধে জয়ী হওয়ায় বালিয়া বাসন্তীর নামকরণ হয়ে যায় ফারে ফারা অর্থাৎ পূর্ণ আনন্দ, যা অপভ্রংশ হয়ে ফুরফুরা নামে পরিচিত হয়। হযরত মনসুর বাগদাদী (রহঃ)-এর ষষ্ঠদশ অধস্তন পুরুষ হিসেবে হযরত মওলানা শাহ্ সূফী আবূ বকর সিদ্দীকী জন্মগ্রহণ করেন। যখন তিনি নয় মাসের শিশু তখন তিনি পিতা আবদুল মুক্তাদিরকে হারান। তাঁর আম্মা মহব্বতুননেসা পিতৃহারা সন্তান আবূ বকরকে যতেœর সঙ্গে লালন-পালন করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। আম্মার আগ্রহেই তিনি লেখাপড়া করেন এবং সেকালে মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী জামা’আতে উলা হাসিল করেন। এছাড়াও তিনি হযরত সৈয়দ আহমদ বেরেলবী রহমাতুল্লাহি ‘আলায়াইহির খলীফা হাফেজ জামালুদ্দীন (রহঃ)-এর তত্ত্বাবধানে তফ্সীর, হাদীস ও ফিক্হ এবং মওলানা বিলায়েত (রহঃ)-এর তত্ত্বাবধানে মানতিক ও হিকমত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রীর বিশেষ সনদ প্রাপ্ত হন। মদীনা শরীফে গিয়ে রওযা মুবারকের খাদেম বিখ্যাত আলিম শায়খুদ্দালাইল আমীন বিদ্ওয়ান (রহঃ)-এর কাছে তিনি তালীম সিহা সিত্তাসহ চল্লিশখানা হাদীস গ্রন্থের সনদ লাভ করেন। তারপর তিনি দেশে ফিরে এসে বিশিষ্ট ফারসী কবি বিখ্যাত পীর সূফী ফতেহ্ আলী ওয়ায়সী (রহ.)-এর মুরীদ হন এবং কামালিয়ত হাসিল করেন। তিনি খিলাফতের সনদ লাভ করেন। অচিরেই পীর হিসেবে তাঁর খ্যাতি অবিভক্ত বাংলা-আসামের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। দলে দলে লোক এসে তাঁর নিকট মুরীদ হতে থাকে। তাঁ পরশে বহু লোক সত্যিকার সূফী হয়ে যান। অবিভক্ত বাংলা-আসাম ছাড়াও আরব দেশেও তাঁর খ্যাতি বিস্তৃত হয়। তিনিই মূলত অবিভক্ত বাংলায় ইসালে সওয়াব ও ওয়াজ মাহফিলের ব্যাপক প্রসার ঘটান। তিনি ১৮৯০ খৃস্টাব্দে ফুরফুরা শরীফে ৫, ৬, ৭ মার্চ তারিখ ধার্য করে ইসালে সওয়াব ও ওয়াজ মহফিল প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর খলীফাগণের বাড়ীতে এই মাহফিলের আয়োজন করতে বলেনÑ যাতে মানুষ হিদায়াতের আলোয় উদ্ভাসিত হতে পারে। তিনি বাংলা-আসামের শহর, গঞ্জ গ্রাম-গ্রামান্তরে গিয়ে ওয়াজ করে পথভ্রষ্ট মানুষকে সঠিক পথের দিশা দিতেন। তাঁর ওয়াজ সম্পর্কে হযরত পীর ছাহেব কেবলার বিস্তারিত জীবনী (প্রথম প্রকাশ ১৯৩৯ খৃ.) গ্রন্থে মওলানা রূহুল আমিন লিখেছেন, ‘তাঁহার কণ্ঠস্বর এমন মধুমাখা এবং গম্ভীর ছিল যে, তাহা নিকটে ও দূরে সমানভাবে ঝঙ্কারিত হইত। তাঁহার মুখ-নিঃসৃত বাণী সকল ভক্তের হৃদয়পটে আঁকিয়া যাইত। অন্যান্য আলেমের দশ বিশ ঘণ্টাব্যাপী ওয়াজ নছিহত করিলেও যেরূপ আছর না হইয়া থাকে, তাহার দশ পাঁচ মিনিট বক্তৃতাতে সেইরূপ আছর হইত। তাহার কণ্ঠ-নিঃসৃত মধুর উপদেশে কত মোশরেক-বেদয়াতি শেরেক-বেদ্য়াত পরিত্যাগ করিয়াছে; কত লক্ষ্য বেনামাজি, বেরোজাদার নামাজ রোজা শুরু করিয়াছে, বেদাড়ি দাড়ি রাখিতে অভ্যস্ত হইয়াছে, কত অনৈসলামিক পোশাকধারী ইসলামী পোশাক পরিধান করিতে শিখিয়াছে, কত অপরহেজগার পরহেজগারে পরিণত হইয়াছে, কত চুরোট, সিগারেট ও তামাকখোর চুরোট, সিগারেট ও তামাক ছাড়িয়াছে। কত সুদখোর, ঘুষখোর, পণখোর, হারামখোর, ঘুষ, সুদ, পণ ও হারামখুরি ত্যাগ করিয়াছে; কত শহর, পল্লী ও বন্দরে মাদ্রাসা, মক্তব ও শিক্ষাগার স্থাপিত হইয়াছে তাহার ইয়ত্তা করা সম্ভব নহে। প্রত্যেক সভাতে ১০/২০/৪০/৫০ হাজার লোক তাঁহার নিকট মুরিদ হইয়াছে। সুতরাং কত লক্ষ লোক তাঁহার মুরিদ শ্রেণীভুক্ত হইয়াছে, তাহার সংখ্যা নির্ণয় করা অসম্ভব।’ (পৃ. ১০৭-১০৮) তিনি হিদায়াতের কাজ আঞ্জাম দেবার লক্ষ্যে একাধিক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আঞ্জুমানে ওয়ায়েজীন, জমিয়তে ওলামা বাংলা-আসাম। শিক্ষা সংস্কারে তাঁর অবদান অপরিসীম। ১৯২৮ খৃস্টাব্দে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসার প্রথম গবর্নিং বডি গঠিত হয়, তিনি এর সম্মানিত সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলা-আসামের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের পথ সুগম করে দেন। নারী শিক্ষার উপরেও তিনি গুরুত্ব প্রদান করতেন। তিনি প্রায় ৮০০ মাদ্রাসা ও ১১০০ মসজিদ স্থাপন করেছিলেন। সেকালে বাংলা ভাষায় মুসলিম সম্পাদকের সম্পাদনায় কোনো পত্র-পত্রিকা ছিল না। তাঁর উদ্যোগ, উৎসাহ এবং পৃষ্ঠপোষকতায় বহু পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল, যেমন : মিহির ও সুধাকর, নবনূর, মোহাম্মদী, সোলতান, মুসলিম হিতৈষী, ইসলাম দর্শন, হানাফী, শরীয়ত, শরীয়তে ইসলাম, আল-ইসলাম প্রভৃতি। তাঁর নির্দেশে বাংলা ভাষায় সহস্রাধিক পুস্তক-পুস্তিকা রচিত ও প্রকাশিত হয়। ইল্মে তাসাওউফ চর্চার ক্ষেত্রে তিনি সর্বাধিক অবদান রাখেন। তিনি বাংলা ভাষায় মুরীদ করানো, যিক্র-আয্কারের নিয়ত বাংলায় করানো, তা’লীম-তালকীন বাংলা ভাষায় প্রদান ইত্যাদির প্রবর্তক। তাঁর লক্ষ লক্ষ মুরীদ দেখলেই বোঝা যায় এরা ফুরফুরা সিলসিলার। তাঁর কয়েকশত খলীফার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন তাঁর পাঁচ সাহেবজাদা, মওলানা নিসারুদ্দীন, মওলানা শাহ সূফী তোয়াজউদ্দীন আহম্মদ (রহঃ), ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (রহঃ), খান বাহাদুর মওলানা আহম্মদ আলী ইনায়েতপুরী (রহ), মওলানা বজলুর রহমান দরগাপুরী, মওলানা ময়েজউদ্দীন আহমদ, সূফী সদরুদ্দীন (রহঃ) প্রমুখ। তাঁর খলীফাগণের সন্তানদের অনেকেই কামিল পীর হয়েছেন। তাঁর আদর্শ ও শিক্ষা এখনও সমানভাবে অব্যাহত রয়েছে। তিনি বাংলা-আসামের ৩১টা ভ- ও বাতিল ফিরকা চিহ্নিত করে যান; বর্তমানে তা প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেছেন : ‘যিনি শরীয়ত ও মারিফাতে কামিল হইবেন তিনিই পীর হইতে পারিবেন।’

এই মহান পীর হযরত দাদা হুযুর কিবলা মুজাদ্দিদ-ই যামান আবূ বকর সিদ্দীকী আল কুরায়শী আল ফুরাবী রহমাতুল্লাহি ‘আলায়হি ১৯৩৯ খৃস্টাব্দের ১৭ মার্চ শুক্রবার সুবিহ সাদিকে ইন্তিকাল করেন, তখন তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯৬ বছর। তাঁর বহু কারামত রয়েছে। বিভিন্ন লেখক রচিত তাঁর জীবনী গ্রন্থ রয়েছে। তাঁর মুজাদ্দিদিয়াতের তৎপরতা এখনও রয়েছে।
Date
Source Own work
Author Moinur chisty

Licensing edit

I, the copyright holder of this work, hereby publish it under the following license:
w:en:Creative Commons
attribution share alike
This file is licensed under the Creative Commons Attribution-Share Alike 4.0 International license.
You are free:
  • to share – to copy, distribute and transmit the work
  • to remix – to adapt the work
Under the following conditions:
  • attribution – You must give appropriate credit, provide a link to the license, and indicate if changes were made. You may do so in any reasonable manner, but not in any way that suggests the licensor endorses you or your use.
  • share alike – If you remix, transform, or build upon the material, you must distribute your contributions under the same or compatible license as the original.

File history

Click on a date/time to view the file as it appeared at that time.

Date/TimeThumbnailDimensionsUserComment
current15:39, 13 September 2021Thumbnail for version as of 15:39, 13 September 20211,040 × 780 (117 KB)Moinur chisty (talk | contribs)Uploaded own work with UploadWizard

There are no pages that use this file.

Metadata